নিজেস্ব প্রতিবেদক:
অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রতিষ্ঠানের হল রুম দখল সহ লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলা ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসা’র সুপার মোঃ জয়নাল আবেদীন ও প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারীর মো. আবুল কাশেম এর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী ও ছাত্র/ছাত্রীর অভিভাবকসহ স্থানীয় অনেকেই।
২৭ এপ্রিল ২০২৩ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিদের্শ মোতাবেক গুইমারা ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রসায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও অভিভাবকদের নিয়ে এক বৈঠকে ২০২১/২০২২ দাখিল পরীক্ষার কেন্দ্র ফি ২ হাজার ৫ শত টাকার বদলে ১ হাজার ৫ শত টাকা করা হলেও সরকার কর্তৃক নির্ধারিত টাকার তুলনায় বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি অভিভাবকদের। শিক্ষার্থীদের সামনে পরিক্ষাকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্খিত ঘটনাকে ভয় করে অনিয়ম দূর্নীতিকেও মানতে বাধ্য হচ্ছে অভিভাবকরা।
সুপারের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাহ আলম, গুইমারা প্রেসক্লাব সভাপতি নুরুল আলম, মাদ্রাসার সহকারি শিক্ষক মো: জামাল উদ্দিন, মো: ইউচুপ, মাদ্রাসার অফিস সহকারী মো. আবুল কাশেমসহ ছাত্র/ছাত্রী অভিভাবকগন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ১হাজার ৫শত টাকা করে কেন্দ্র ফি প্রদান করতে হবে, তবে এর জন্য কোনো রশিদ দেওয়া হবে না। এসময় যাদের নিকট থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়েছে, তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।
দাখিল পরিক্ষার্থীর এক অভিবাবক জানান, এ বছর ফরম ফিলাপের জন্য ২৫০০ টাকা, কোচিং ফি ২৫০০ টাকা এবং কেন্দ্র ফি ৩০০০ টাকা করে ফি আদায় করছেন বলে অভিযোগ করেন। এ ছাড়াও কেন্দ্র ফি দিয়ে টাকা বেচে গেলে সেগুলো ফেরত দেবার দোহাই দিয়ে আত্মসাৎ করে দিচ্ছেন সুপার ও মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা। শিক্ষার্থীরা টাকা দিলেও মাদ্রাসার সুপার সু-কৌশল দিচ্ছেনা কোনো রশিদ। এভাবেই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি বছরেই হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
গত বছরের দাখিল পরীক্ষার্থী জানান, সুপার হুজুর আমাদের ফরম ফিলাপে ৩৮০০ টাকা নিয়েছে, যা সরকারি নির্দেশনার ৩গুন বেশি। এডমিট কার্ড ও কেন্দ্র খরচের নামে ১১৫০ টাকা নিয়েছে বলেও তারা জানান। অথচ কেন্দ্র ফি মাত্র ৩শত ৫০ থেকে ৪শত টাকা। মাদ্রার সাবেক এক ছাএ বলেন সুপার হুজুর ছাড়পত্র নেওয়ার সময় ৮শত টাকা করে নিয়েছে। এই নিয়ে সুপার এর বিরুদ্ধে সাবেক ছাত্র, অভিভাবক ও বর্তমান ছাত্ররা একত্রিত হয়ে গণস্বাক্ষর করে অভিযোগ করেন।
অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়ে মাদ্রাসার সুপার জয়নাল আবেদীন বলেন, পরিক্ষার কেন্দ্র ফি এবং যাবতীয় অতিরিক্ত খরচ রয়েছে। সেই খরচের জন্য শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। তবে মাঝে মাঝে বেশ কিছু শিক্ষার্থী টাকা দেয় না, তাই অতিরিক্ত টাকা নিতে হয়।
অন্যদিকে মাদ্রসার শ্রেনীকক্ষ দখল করে স্ব-পরিবারে বসবাসের বিষয়ে গুইমারা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি শাহ আলমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, শ্রেনীকক্ষ দখল করে বসবাস নিয়মের বর্হিভূত। প্রায় ২ বছর যাবৎ শ্রেনীকক্ষে স্ব-পরিবারের বসবাস করে আসছে বলে সত্যত্যা স্বীকার করেন।
এই বিষয়ে ১৮ এপ্রিল ২০২৩ উপজেলার একটি সভা শেষে সুপারের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগের বাদী আবুল বাশারের প্রশ্নের জবাবে গুইমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রক্তিম চৌধুরী বলেন, গুইমারা দাখিল মাদ্রাসার সুপারের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। সরকার ঘোষিত মূল টাকা ব্যতিত অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হলে তা ফেরত দিতে হবে। এছাড়াও শ্রেনীকক্ষ দখল করে বসবাসের বিষয় জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, শ্রেনীকক্ষ দখল করে সহপরিবারের বসবাসের বিষয়ে কমিটির সাথে আলোচনা করে তদন্ত স্বাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, জরাজির্ণ ভাঙ্গা ফ্যানবিহীন শ্রেনী কক্ষে পাঠ দান করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কিন্তু ২য় তলায় বিল্ডিং কক্ষ দখল করে বসবাস করছে সুপার জয়নাল ও তার পরিবার। এই বিষয়ে বার বার সংবাদ প্রকাশ হলেও অদ্যবদি বহাল তবিয়্যতে বিদ্যমান রয়েছেন তিনি।
গুইমারা উপজেলার সচেতন মহল জানান, র্দীঘদিন যাবৎ গুইমারা দাখিল মাদ্রাসার সুপার একের পর এক অনিয়ম দূর্ণীতি ও অতিরিক্ত ফি আদায়ের নামে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে। এছাড়া র্দীঘ ২ বছর যাবৎ শ্রেনীকক্ষ দখল করে স্ব-পরিবারের বসবাস করে আসছে, যা সরকারি নিয়ম বর্হিভূত। তাই এসকল অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্ত স্বাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান।
Leave a Reply