নিজেস্ব প্রতিনিধি: ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব বৈসু উৎসবে আজ খাগড়াছড়ির ঐতিহাসিক তীর্থস্থান মাতাই পুখিরীতে জমে উঠেছে জনস্রোত। উৎসবের প্রথম দিন ‘হারি বৈসু’ উপলক্ষে আয়োজিত তীর্থমেলায় অংশ নিতে আজ সকাল থেকেই লাখো মানুষের আগমন ঘটে আলুটিলা পর্বতশ্রেণীর চূড়ায় অবস্থিত দেবতা পুকুর এলাকায়।
রঙিন বেলুন ও সাদা পায়রা উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তীর্থমেলার উদ্বোধন করেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা। আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবারের তীর্থমেলায় ৫০ হাজারের বেশি দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ২০৩ পদাতিক ব্রিগেড ও রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মোঃ আমান হাসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি সদর জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মোঃ খাদেমুল ইসলাম, পিএসসি এবং মহালছড়ি জোন কমান্ডার।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মাতাই পুখিরী উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা নবলেশ্বর ত্রিপুরা লায়ন, আহ্বায়ক জ্ঞান দত্ত ত্রিপুরা, সদস্য সচিব পিন্টু ত্রিপুরা, সেনা রিজিয়নের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ।
ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর অন্যতম দুই তীর্থস্থান সীতাকুন্ড ও মাতাই পুখিরীর মধ্যে পর্বতটি খাগড়াছড়ি সদর থেকে ১২ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে, আলুটিলা পর্বতশ্রেণীর চূড়ায় অবস্থিত। ত্রিপুরা ভাষায় ‘মাতাই পুখিরী’ অর্থ দেবতা পুকুর।
প্রায় ১৭০টি ছোট-বড় পর্বতের সমন্বয়ে গঠিত আলুটিলা পর্বত শ্রেণীর সর্বোচ্চ চূড়া হলি কুমারী পর্বত, যার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২০০০ ফুট। এখানেই অবস্থিত কাকচক্ষুর মতো স্বচ্ছজলধারা বিশিষ্ট মাতাই পুখিরী, যা খরা মৌসুমেও শুকায় না।
স্থানীয় জনশ্রুতি অনুসারে জানা যায়, ১৫১২ খ্রিস্টাব্দে ত্রিপুরা সেনাপতি রায়কাচাক আরাকান অভিযানকালে পুকুরটি খনন করেন। পরে, ১৬৬৩ খ্রিস্টাব্দে নির্বাসিত মহারাজা গোবিন্দ মানিক্য শিব পূজা শেষে কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ বিসর্জনের মাধ্যমে এই পুকুরকে তীর্থ হিসেবে প্রবর্তন করেন। তাই তাকে মাতাই পুখিরীর প্রবর্তক হিসেবে স্মরণ করা হয়।
ত্রিপুরা জাতির বিশ্বাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত মাতাই পুখিরীকে ঘিরে বহু কিংবদন্তিও প্রচলিত রয়েছে।
Leave a Reply